আলিফ মারা গেছে এটা জানতে পেরেছি আমি এক সাপ্তাহ পর! ব্যস্ততার কারণে একসাপ্তাহ ধরে সবার সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যেই ঘটে গেলো এই মর্মান্তিক ঘটনা!
সাইক্লিস্ট আলিফ
কক্সবাজার গেলেই যাদের নিয়ে সাইকেল ট্যুর দিতাম তাদের একজন আলিফ। কক্সবাজার সাইক্লিস্টের সাথে আমার পরিচয় আজ অনেকদিন। আলিফের সাথে সখ্যতা গড়েছে প্রথমদিক থেকেই। কমিউনিটিটিকে আলিফের চাইতে কেউ বেশি ভালোবাসে বলে আমার মনে হয়নি। আমার প্রথম ৫০ কিলোমিটার আপ সাইক্লিংও করেছি ওর সাথেই। করোনার শুরুর দিকের কনকনে শীতে উপেক্ষা করে আমরা একসাথে মেরিন ড্রাইভ চষেছি, রেইস দিয়েছি, ক্লান্ত হয়ে সালসা পয়েন্টে চা খেয়েছি। সবই স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আলিফ আর আমি
আলিফ যে অসম্ভব রকম সাইক্লিং ভালোবাসে তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি! মাঝখানে আমি একবার আমার সাইকেলের মেইনটেইনেন্সের জন্যে রিসল ভাই এর দোকানে গেলাম। রিসল ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, আলিফকে দেখছিনা, ও কই গেলো! তিনি বললেন, আলিফ চিকিৎসার কাজে ভারত গিয়েছে। আলিফের অসুস্থতার কথা আমি জানতাম, আর কথা বাড়ালাম না। এর দু'দিন পরে আরেক কাজে ভাই এর দোকানে গেলাম। দেখি, আলিফ বসে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে চলে আসলে যে! আলিফ বললো, তার সাইক্লিং করা ছাড়া একটানা কোথাও ভালো লাগেনা। আলিফের সাইকেলও ছিলো অনেকগুলো। আমি একবার বললাম, এতো সাইকেল কেন রাখো? ওর উত্তর ছিলো, ভাই আমার হাতে টাকা আসলে আমি অন্য কিছু না কিনে সাইকেলই কিনবো! রোদে সাইক্লিং করলে মাঝেমধ্যে তার কষ্ট হতো। তারপর ও সে এটি করতো। কারণ, তার ভালো লাগতো।
আলিফ ভালো অর্গনাইজার ছিলো। সফলভাবে অনেকগুলো জনহিতকর প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্লাস্টিক পরিস্কার করা, মাদক দ্রব্য ছেড়ে সাইক্লিং এর মতো সুন্দর বিকল্প খোঁজে নেয়া, বয়োবৃদ্ধদের সকালে হাটা ও দৌড়ানোতে অভ্যস্ত করা সহ নানান কাজে আলিফ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
আলিফ যে গুরুতর অসুস্থ তা সাইক্লিং কমিউনিটির সবাই জানতাম। তাই যখনই ওকে দেখতাম আমার ভালোখারাপ একসাথে লাগতো। ওকে খুব দ্রুত হারিয়ে ফেলবো এটা আমরা কেউই চাইনি, কখনোই না। কিন্তু, যার যাবার সে চলে যায়। এ সংক্ষিপ্ত সময়ে আলিফ তার অবস্থান থেকে যতটুকু জনহিতকর কাজ করা দরকার ছিলো করেছে। অন্তত, আমি সেটি বিশ্বাস করি এবং আশা রাখি, দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করে।